ঘাটালের বইমেলা। মানুষে ঠাসা মেলার ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল স্নিগ্ধা, পাশে স্বামী মানিক। বইয়ের স্টল ঘুরে দেখতে দেখতে আচমকাই যেন সময় থমকে গেল। স্নিগ্ধার চোখ আটকে গেল একটা চেনা মুখে। রঞ্জিত! প্রায় দশ বছর পর।

 

রঞ্জিত তখন একটি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই দেখছিল। হালকা গাঢ় দাড়ি, চোখে সেই একই গভীরতা। স্নিগ্ধার বুকের ভেতর যেন কেউ একটা হ্যামার মেরে দিল। হাতের ব্যাগটা সামলাতে সামলাতে সে দাঁড়িয়ে গেল। তার ভেতরটা তোলপাড় করে দিতে পুরোনো দিনগুলো হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল মনে।

 

তখন তারা দু’জনেই কলেজে পড়ত। দুজনের সম্পর্ক ছিল খুব গভীর। প্রেম যেন দুজনের জীবন হয়ে উঠেছিল। স্নিগ্ধা বিশ্বাস করত, রঞ্জিতই তার জীবনের সঙ্গী। কিন্তু সেই সোনালি দিনগুলো একদিন যেন কালো মেঘে ঢেকে গেল। রঞ্জিতের জীবনজুড়ে এসে পড়ল এক বিশাল দায়িত্ব। পিতৃহীন সংসারে রঞ্জিতকে চাকরির জন্য বাড়ি ছাড়তে হয়। স্নিগ্ধা অপেক্ষা করেছিল, অনেকদিন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সম্পর্কটা ফিকে হয়ে যায়। একসময় মানিকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়।

 

“স্নিগ্ধা?” – রঞ্জিতের ডাকে চিন্তার ভাঙন ঘটল। চোখ তুলে সে দেখল, রঞ্জিত ঠিক তার সামনেই দাঁড়িয়ে। পরিচিত কণ্ঠস্বর এখনো হৃদয়ের ভেতর এক তোলপাড় তৈরি করে।

“তুমি এখানে?”

 

মানিক এদিকে পেছনে দাঁড়িয়ে কী হচ্ছে বুঝতে পারল না। সে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার বন্ধু?”

স্নিগ্ধা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করল, কিন্তু হাসি ফিকে হয়ে গেল।

 

“তুমি কেমন আছো, স্নিগ্ধা?” রঞ্জিতের কণ্ঠে চাপা আবেগ।

“ভালো। তুমি?”

 

দুজনের মধ্যে কথা হচ্ছিল, অথচ অজস্র কথা না বলেও যেন সবকিছু স্পষ্ট হচ্ছিল। সময়টা হয়তো তাদের আলাদা করে দিয়েছে, কিন্তু পুরোনো স্মৃতিগুলো এত সহজে মুছে যায় না। রঞ্জিত হয়তো আজও ভাবতে পারে, স্নিগ্ধা তার জীবনের অংশ হতে পারত। আর স্নিগ্ধা? তার ভেতরেও কোথাও একটা ক্ষত রয়ে গেছে।

 

“তোমার পরিবার?” স্নিগ্ধার প্রশ্নে রঞ্জিত একটু সময় নিল। “মা আছে। আমি এখন পুণেতে চাকরি করি। ভালো আছি।”

কথাটা সত্যি, নাকি শুধু বলার জন্য বলা, সেটা স্নিগ্ধা বোঝার চেষ্টা করল না।

 

সেদিনের সেই ঘটনাটা তাদের দুজনকেই নতুন করে ভাবায়। মানিক হয়তো পুরো গল্পটা জানবে না, কিন্তু স্নিগ্ধার মুখ দেখে কিছু একটা টের পেয়েছিল। স্নিগ্ধা হয়তো বুঝতে পারল, জীবন সবসময় অতীতের ক্ষত থেকে দূরে এগিয়ে যেতে বলে।

 

রঞ্জিত আবার সেই ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেল। স্নিগ্ধা ফিরে গেল তার জীবনের পথে, কিন্তু বুকের গভীরে কোথাও একটা অনুভূতি রয়ে গেল, যা হয়তো কখনো মুছবে না।

0 thoughts on “Old Memories”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top